হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

মো. সুমন মিয়া

প্রথম পর্বের পর

আমরা প্রথম দিন সংক্ষিপ্ত সময়ে দরবার স্কয়ার দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। হোটেল থেকে রিকশায় সেখানে পৌঁছাই। এরই মধ্যে পরস্পরের যোগাযোগের জন্য নেপালি সিম ও রুপি সংগ্রহ করি। সেখানের রিকশা চালকগুলোও খুব স্মার্ট— সুয়েটার, প্যান্ট ও কেডস্ পরিহিত। পাশেই সার্কের কার্যালয়। সার্কভুক্ত রাষ্ট্র হওয়ার কারণে আমরা অনেক মূল্যায়ন ও সুযোগ সুবিধা পাই। আমরা পায়ে হেঁটে শহরের অজানা সৌন্দর্য দেখতে দেখতে হোটেলে ফিরি।

নাগরকোট কাঠমুন্ডু থেকে ৩২ কিলোমিটার পূর্বে, যেখান থেকে হিমালয়ের জমকালো সূর্যোদয় দেখা যায়। নাগরকোট গ্রাম পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত গ্রাম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের গ্রামে বসবাসকারী মানুষ মাঠ থেকে উপরে তাকিয়ে আকাশ দেখে। এখানে গেলে আপনি নিচে তাকিয়ে আকাশ দেখতে পারবেন।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

দুই দিনের জন্য আমরা একটি গাড়ি ভাড়া করলাম। বেশ চড়াই, এবড়োখেবড়ো সরু রাস্তা, এমন কিছু বাঁক আছে যা ওখানকার দক্ষ চালক ছাড়া কেউ ঠিকঠাক গাড়ি চালাতে পারবে না। একটু এদিক-ওদিক হলেই থাকবে সহস্র ফুট নিচে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি। মন ভরানো নীল আকাশ, সবুজ পাতায় দোল খাওয়া ছোট্ট সাইনবার্ড যেন মানুষের বদলে আজ পুরোটা পথ ওরাই দখলে নিয়েছে।

হোটেল থেকে নগরকোটের উদ্দেশে ভোর হওয়ার আগেই রওয়ানা হলাম। গাড়িতে আমরা ফজরের নামাজ আদায় করি। এখানে আজানের সুরে মানুষের ঘুম ভাঙে না। ঘড়ি দেখেই আমাদের নামাজ পড়তে হলো। মসজিদ চোখে পড়াটা খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। তারপরও ভোর রাতের এই দৃশ্যটা খুবই ব্যতিক্রম। এখানে নিচের দিকে তাকালে জ্বলে থাকা বৈদ্যুতিক বাতি তারকা আর সমস্ত গ্রামটি আকাশ দেখার স্বাদ মিটায়।

চূড়ায় ওঠার মুহূর্তে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি কাঠমান্ডু থেকে নাগরকোট যেতে আমাদের সময় লাগল দুই ঘণ্টা। কাঠমান্ডু থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরত্ব হওয়ার কারণে পর্যটকদের আকর্ষণ উপচে পড়ছে এর সারা দেহে।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

চূড়া বেয়ে ওপরে ওঠার ক্ষণে ক্ষণে দেখা হলো বহু ইউরোপীয় পর্যটকদের সঙ্গে। কেউ মোটরসাইকেলে কেউবা পায়ে হেঁটে উপরে উঠছে। তারা প্রচুর অর্থ এবং সময় ব্যয় করে এসেছেন হিমালয়কন্যার অপরূপ হাসিটি মনের মণিকোঠায় ধরে রাখার জন্য। অপরূপা নাগরকোটের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এটি, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গ্রাম। এটাও এখানে কিংবদন্তি যে, পৃথিবীর অন্যান্য গ্রামে বসবাসকারী জনগণ যখন মাঠ থেকে গগন অবলোকন করেন, সেখানে নাগরকোটের বাসিন্দারা অনেকটা নিচে তাকিয়ে নীলিমার নীল পরখ করেন। স্বর্গের অপার্থিব সৌন্দর্য। পাহাড়ের একদিকে সূর্যোদয় অপর দিকে হিমালয়ের শুভ্রগায়ে পতিত সূর্যালোকে ভেসে উঠা ধবল চূড়ার দৃশ্য। হাজার হাজার লোক সেখানে অপেক্ষা করে এই দৃশ্য দেখার জন্য। টিকেট কেটে সেখানে জায়গা নিতে হয়।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

ফেরার পথে দেখছিলাম পাহাড় থেকে লাফিয়ে নামছে খুব সরু ঝিরঝিরে ঝর্ণা। কৃষাণের ঘরের উঠানে লাল বনমোরগের দাপাদাপি। শুকরছানাদের দৌরাত্ম্যও দেখার মতো। গ্রামে রৌদ্রস্নানে জেগে উঠছে শুকাতে দেওয়া ভুট্টা আর আলুবোখারা।

এভারেস্ট ছাড়াও আরও কয়েকটি ভিউ যেমন লাংটাং, মানাসলু, গৌরীশঙ্কর চূড়া এখান থেকে পরিষ্কার দেখা যায়। চূড়ায় ওঠার মুহূর্তে আরও দেখতে পাবেন, আগন্তুকদের চাহিদা মেটাতে আমাদের দেশের ছোট্ট টং দোকানের মতো কয়েক কিলোমিটার পরপরই অনেকগুলো মেহমানখানা। যেখানে অল্প টাকায় স্যুপ, নডুলস, চিকেন ফ্রাই, রাইস পাওয়া যায়। আবার সিগারেট থেকে মদ সব এখানে নাগালের মধ্যে।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

সারাংকোটে দিনের শুরুতে যখন শীতের কুয়াশা ঠেলে সূর্য মামা নিজের উপস্থিতি জানান দিতে চাচ্ছে, আমরা তখন সারাংকোটের সর্বোচ্চ টাওয়ারে। লজ্জায় রাঙা সূর্যটা। সে লাজের ছোঁয়া লাগে সারাংকোটে। মনে হলো প্রথম পলকেই প্রেম। পাহাড়ি পথ বেয়ে শরীরে প্রচণ্ড ক্লান্তির ধকল তবুও মনপোড়ানো প্রেমের পিয়ানোতে বাজছে সারাংকোটের মিষ্টি হিমেল বাতাস। সেই বাতাসেই যেন শোনলাম মহাকবি শার্ল বোদলেয়ারের প্রতিধ্বনি, ‘বলো, আমাকে রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো?’ আমি দেখছি, আশ্চর্য মেঘ কেটে কেটে প্রশ্নকে প্রশ্রয় দিয়ে কিভাবে বড় হচ্ছে ঝকমারি সূর্য। বিস্ময়ে অভিভূত নরম আলো আর কুয়াশায় কেমন করে ভিজে উঠেছে সারাংকোট; ভেসে চলা সাদা মেঘেরা হঠাৎ যেন ব্যস্ত হয়ে উঠল। একমুঠো ধূসর কালো মেঘ এসে জড়ো হলো। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এলো তার অনন্ত আদর নিয়ে। বৃষ্টি আর পাহাড়ের হিমে কাঁপতে কাঁপতে চেয়ে দেখি, শখের ডিজিটাল ক্যামেরার তথৈবচ অবস্থা। বুনো ঘাস আর কমলালেবুর গন্ধ মাড়িয়ে আমরা ফিরে আসি হোটেলে।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির বানরের মন্দির হিসেবে খ্যাত। ২ হাজার ৪০০ বছর ধরে সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে মন্দিরটি। বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান নেপাল হলেও নেপালের অন্য পরিচয় দেশটর পৃথিবীর বুকে একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র। হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের সম্প্রীতির এই যে মিলন, তাতে বড় ভূমিকা রাখছে, কাঠমান্ডু উপত্যকা পাহাড়ের এই মন্দির। হাজারো পুণ্যার্থী আর পর্যটকের ভিড় ঠেলেই, বুদ্ধের মূর্তি দেখতে দেখতে আমরা এগোই। ৩৬৫টি সিঁড়ি বেয়ে মাঙ্কি টেম্পলে ওঠার কসরতে। এ এক বিশাল শারীরিক অনুশীলন। আমরা বানরদের সঙ্গে বাদরামি করতে করতে কখনো শিশু হয়ে যাই। বানরগুলোও  চিপস, চকলেটের লোভে পড়ে সঙ্গী হয়।

ছবি উঠাতে গেলে বানর কয়েকটি দল বেধে আমার দিকে তেড়ে আসে। স্থানীয় একজন বললেন, ‘সাবধান সাহেব, এই বান্দর বহুত খতরনাক’। আমি সাবধান হয়ে যাই।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

সর্বোচ্চ ওপরে উঠে আমাদের ভালো লাগে রাজধানী কাঠমান্ডুর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য দেখে। ছবি তোললাম আর পুরো শহরের রূপ দেখলাম চাতক পাখির চোখে। এখানে দর্শনার্থীদের ভিড়; কেউ পূজা অর্চনা করছে কেউ ঢোল তবলা বাজিয়ে গান করছে, কেউ বসে বসে দেখছে। অনেকেই সেলফি তোলছেন। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামাটা বেশ সুখকর হলেও মনে হলো সুকান্ত বাবু চলে এসেছেন কাছাকাছি বুঝি ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’ কথাটি জানাতে।

আমরা কাছাকাছি একটা কনফেকশনারিজ দোকানে ঢুকলাম। মধ্যবয়স্ক মহিলা নেপালি রীতিতে প্রার্থনার ভঙ্গিতে সম্ভাষণ জানান, হাতের পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আগন্তুকদের বসার জায়গা মুছে দিলেন। অদ্ভুত এক আন্তরিকতার ছোঁয়াতে সংবিৎ হারাই! সমাজতান্ত্রিক সমাজের মনোভাবাপন্ন নেপালিদের অতিথি ভালোবাসার আসলে জুড়ি নেই। বিল এল নিয়মমাফিক ও রীতিসিদ্ধ অন্যান্য পর্যটক দেশের মতো পকেট কাটার বন্দোবস্ত এখানে একেবারে নেই।

এরপর আমরা এগোতে থাকি, কাঠমান্ডুর আরেক বিস্ময় পশুপতিনাথ মন্দিরের উদ্দেশে। প্রথমেই মনে হলো মন্দিরটি চৌকোনা। সারা গায়ে সোনা আর রুপার ঝলক। প্রধান দরজা খুঁজে পেতে গিয়ে ধাক্কা খেতে হলো! প্রধান দরজা চারটি এবং সেই চারটিই রুপায় আবৃত। ভেতরে ঢুকে দেখি, মন্দিরের পবিত্র কক্ষ। এখানে ছয় ফুট লম্বা দীর্ঘ শিবলিঙ্গ। নিচ থেকে মন্দিরের চূড়াটা পর্যবেক্ষণ করলাম। জানলাম এটাও খাঁটি সোনার তৈরি। ইতিহাসের ছাত্রদের জন্য বেশ জরুরি এ জায়গাটা ঘুরে যাওয়া। কেননা এখানে রয়েছে রামায়ণ, পুরাণের বিভিন্ন কাহিনীচিত্র যার জৌলুশ, পৃথিবীর নানা দেশের পর্যটকদের এ দেশে টেনে আনছে।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

পোখারাকে বলা হয়, ‘হেভেন অফ দ্যা নেপাল’। নেপালের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পোখারা। নেপালি ভাষায় পোখারা অর্থ পুকুর বা দিঘী। নেপালের তৃতীয় বৃহত্তম এই শহরটি অন্নপূর্ণা চূড়ার বেজ ক্যাম্পের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। কাঠমুন্ডু থেকে এর দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পোখারার মনোরম জলবায়ু এবং নির্মল বাতাস আপনাকে প্রশান্তি এনে দেবে। পোখারার ফেউয়া লেকে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ তুলনাহীন। বাঞ্জি জাম্প, জিপ ফ্লাইং, প্যারা গ্লাইডিং, রিভার রাফটিং ইত্যাদি অ্যাডভেঞ্চারের জন্য পোখারাই সেরা। তবে যাদের উচ্চতা ভীতি আছে তারা বাঞ্জি জাম্প থেকে বিরত থাকবেন।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

‘ডেভিস ফলস’ নেপালের অন্যতম প্রাকৃতিক ঝর্ণা। ৫০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০০ মিটার গভীর এ ঝর্ণা পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণের জায়গা। বছরের প্রায় সব সময় ডেভিস ফলসের প্রবেশপথের সামনে অনেকগুলো ছোট ছোট দোকান থাকে। বেশিরভাগ দোকানেই নারী বিক্রেতা। এর মধ্যে খুব কম সংখ্যক নেপালি। ভারত এবং তিব্বতের নারীদের উপস্থিতি বেশি। কয়েকটি দোকান নারী-পুরুষের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত। নেপালি পণ্যে সাজানো দোকানগুলো। নারীর ব্যবহারযোগ্য বর্ণিল পাথুরে অলংকার, স্থানীয় পোশাক পরিচ্ছদ, শীতবস্ত্র, রাধাকৃষ্ণ, গৌতম বুদ্ধের মূর্তি ইত্যাদি পাওয়া যায়।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

এছাড়া ট্র্যাকিংয়ের জন্য জনপ্রিয় ‘অন্নপূর্ণা’। শীতে কেবল অতিরিক্ত বরফের জন্য মাঝেমাঝে ট্র্যাকিং বন্ধ থাকে। এছাড়া গোল্ডেন গেইট, লুম্বিনি, ভীমসেন টাওয়ার, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামসহ আরও বেশকিছু আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

হিমালয়কন্যার দর্শনে (পর্ব-২)

এই সেই পবিত্র গুহা যার নামে নেপালের নামকরণ। নেপাল নামের উৎপত্তি নে (পবিত্র) এবং পাল (গুহা) শব্দ দুটি থেকে। যার অর্থ ‘পবিত্র গুহা’।

পোখারায় পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য রয়েছে শপিংমল ও আলোক সজ্জিত শোরুম এবং সাধারণ পর্যটকদের জন্যও রয়েছে ছোটখাটো দোকানপাট। আমাদের অনেকেই এখানে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমরা এখানে কিনলাম পশমিনা শাল, নেপালি টুপি, আংগোরা সোয়েটার, জ্যাকেট, পাথরের মালা, দুল, লিপস্টিক, ব্রেসলেট, চুড়িসহ মনিহারি পণ্য। বেশ কিছু নিজেদের জন্য বাকিটা স্বজনবন্ধুদের মাঝে উৎসর্গ করা হবে। এখানে কলকাতার অনেক বাঙালি মেয়েও বিপণী বিতানে চাকরি করে। এমন অনেকের সঙ্গেই আমাদের পরিচয় হয়। এসব বিপণী বিতানে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে।

পোখারার রাতের দৃশ্য দিনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। দিনে শুনশান নীরবতা আর রাতে প্রতিটি বারে ড্যান্স মিউজিক চলে। সুরার আসরগুলোতে সাদা চামড়ার ইউরোপীয়ান ও আমেরিকানদের দেখা যায়।  রেস্তোরাঁতে তিল ধারণের ঠাই থাকে না। কেএফসিগুলোও তাদের পদচারণয় মুখরিত হয়ে উঠে। শুধু পোখারায় নয়, থামেলেও একই দৃশ্য। দালালরা এসে হোটেলের কথা বলে বিভিন্ন মৌজ মাস্তির অফার করে।

পোখারায় একটা ছোটখাটো রেস্তোরাঁ আছে, নাম মামনি রেস্তোরাঁ। এতে তাজা সবজি, ভাত, রুটি, ভর্তা, সোপ অর্ডার করে রান্না করানো যায়। একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী, ছেলে ও দুই মেয়ে হোটেলটি পরিচালনা করে। খুবই আন্তরিক। একেবারে বাংলা খাবার।

পোখারা থেকে থামেলে ফেরার পথে আমরা একটু বিপাকে পড়ে যাই। আমাদের হোটেল থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের উপর এক রাস্তায় আমাদের গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ির হেড লাইট বন্ধ হলে অন্ধকার ছাড়া রাস্তার সামনে পিছনে আর কিছুই দেখা যায় না। ড্রাইভার থামেল হোটেলে ফোন দিয়ে জানালো মিস্ত্রি আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগবে। আমাদের চেহারা ফেকাসে হয়ে গেল। একদিকে ক্লান্তি, অপরদিকে ক্ষুধা, রাত প্রায় ১০ টা বাজে। গাড়ি থেকে নেমে আমরা অনেক দূর সামনে এগিয়ে একটি ছোট দোকান পেলাম। সেখানে বিস্কুট, চানাচুর, কেক ও পানি খেতে খেতে দোকানদারের সঙ্গে আমাদের সমস্যার কথা শেয়ার করলাম। সে আমাদের অভয় দিয়ে ফোন করে একজন মিস্ত্রি নিয়ে আসল। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে গাড়ি ঠিক হলো। এই ফাঁকে তার সঙ্গে আমরা আলাপচারিতায় মেতে উঠলাম। সেও কথায় খুব দক্ষ লোক। নিজ ভাষায় বুলি আওড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা খুব আগ্রহ ভরে তার কথা শোনলাম।

তার কথার সারাংশ এমনটি—নেপালের ভূখণ্ড: ১,৪৭,১৮১ বর্গ কিলোমিটার; জনসংখ্যা: ২,৩১,৫১,৪২৩ জন। যার মধ্যে ৮১ শতাংশ হিন্দু, ৯ শতাংশ বৌদ্ধ, ৪ শতাংশ মুসলিম এবং ৬ শতাংশ অন্যান্য। শিক্ষার হার: ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ। নেপাল কখনো কোনো পরাশক্তির অধীনে ছিল না, তাই তারা বিজয় দিবস পালন করে না, তবে গণতন্ত্র দিবস পালন করে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত নেপাল রাজতন্ত্র ছিল, এরপর গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিশ্বের সব দেশের পতাকা আয়তাকার হলেও একমাত্র নেপালের পতাকা ত্রিভুজাকৃতির। নেপাল ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। ২০১৫ সালে নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। নেপালের অর্থনীতি মূলত পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক বছর হাজারো পর্যটক ভ্রমণ করেন এই পাহাড়িকন্যার দেশে। এদেশে কোনো সমুদ্রবন্দর নেই, তাই কলকাতা বন্দর ব্যবহার করে।

শেষদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহ’ কবিতা আবৃত্তি করি—

বল বীর-
বল উন্নত মম শির।
শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির! 

আবৃত্তি করে প্রথম স্থানের পুরস্কার অর্জন করি।
এরই মধ্য দিয়ে শেষ হয় আমাদের আবেগ মিশ্রিত স্মৃতি বিজড়িত বহুকাঙ্খিত নেপাল সফর। আমরা পাড়ি দেই দেশের পথে মা ও মাটির টানে।

[সমাপ্ত]

লেখক: সিনিয়র অফিসার (এডমিন) গাজী অটো টায়ার্স, গাজী গ্রুপ; সম্পাদক, চান্দিনা দর্পন

সারাবাংলা/আইই

Explore More Districts