আশুলিয়া কঠোর লকডাউনে পশুর হাট, সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার আশংকা (ভিডিও)
নাজমুল হুদা , আশুলিয়ার থেকে ফিরে : করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অনেক স্থানে আশুলিয়ার গরু-ছাগলের হাট বসেছে। এ রকম একটি হাটে ৭শতাধিক গরু আনা হয়েছে বিক্রির জন্য। এসব গরুর চারপাশে কয়েক হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার জটলা। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। ক্রেতাদের সঙ্গে বেশ কিছুসংখ্যক শিশুরও দেখা মেলে। এ চিত্র বুধবার আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার পশুর হাটের। এভাবে অবাধে ঘুরে বেড়ানোর কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওই হাটের অন্যতম উদ্যোক্তা এলাকার ইয়ারপুর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মজিবুর রহমান সাহেদ এর মেয়ের জামাই ফরিদ মাদবর বলেন, প্রতিবছর আশুলিয়ার স্কুল মাঠে প্রতি বুধবার দিনব্যাপী পশুর হাট বসানো হয়। এবারও সাভার উপজেলার থেকে ইজারা নিয়ে ৩৬৫ দিনের জন্য হাটটি বসেছে। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় আর সন্ধ্যায় হাট শেষ হয়ে যাবে। ওই হাটে ৭/৮ শতাধিক গরু-ছাগল বিক্রি হয়। করোনার কারণে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
বুধবার বিকালে ওই হাট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের ৭শতাধিক গরু বিক্রির জন্য সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা কোনো সামাজিক দূরত্ব না মেনেই গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দরাদরি করছেন। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতারই মুখে মাস্ক নেই। বেশ কিছু ক্রেতার সঙ্গে এসেছে তাঁদের শিশুসন্তানেরাও। এসব শিশুর মুখেও মাস্ক নেই। কয়েকজন ক্রেতাকে হাত ধরাধরি করেও ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
একপর্যায়ে কথা হয় আশুলিয়ার এলাকার সাহেদ সঙ্গে। তিনি বলেন, জন্য তাঁরা ২১জন মিলে ইজারা নিয়েছে ।
রফিকুল ইসলাম একটি বড় গরু কিনতে এ হাটে এসেছেন। এখনো গরু কিনতে পারেননি। তাঁদের সামর্থ্যের চেয়ে গরুর দাম বেশি। আজ কিনতে না পারলে আবার আগামী হাটে আসবেন।
আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার নাছির তাঁর দুটি অল্প বয়সী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘গরু কিনার লইগা হেই সকালে এনো আইছি। একটার দরদাম করছি। দাম ৭০ হাজার টেয়া। তয় দামটা কিছুডা বেশিই মনে অইল।’ ছেলেদের কেন নিয়ে এসেছেন, করোনাকে ভয় পান না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই গরু দেহনের লইগা এনো আইছে। হাট দেহনের ওগো খুব শখ।’
ওই হাটের গরু বিক্রেতা উপজেলার নওগাঁও এলাকার মো. নাসির হোসেন বলেন, আজ হাটে বিক্রির জন্য ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে দুটি গরু বিক্রি হয়েছে। বেশির ভাগ ক্রেতাই দর–কষাকষি করে চলে যান। করোনার কারণে এবার হাটে ক্রেতার সংখ্যাও কম। পরে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে পারে।
হাটের পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে উপজেলার এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পশুর হাটে গরু কিনতে ওই হাটে গেছিলাম। দেহি, হেনো শারীরিক দূরত্বের বালাই নাই। ক্রেতা-বিক্রেতারা গা–ঘেঁষাঘেঁষি কইরা দাঁড়াইয়া আছে। অনেকের মুখেই মাস্ক নাই। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও ঝুলাইয়া রাখছে। জটলা কইরা মানুষ গরুর দরদাম করতাছে। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তাছে। হেগো দেইখা মনে অইছে, করোনা হেগো কিছুই করতে পারব না। কিসের স্বাস্থ্যবিধি মানা, কিসের কী। লগে (সঙ্গে) শিশুদেরও লইয়া আইছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ডা,সায়েমুল হুদা বলেন, আশুলিয়ার পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তদারকি জোরদার করা হবে।